আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ, না তোমাদের সন্তানসন্ততি কোন কিছুই যেন তোমাদেরকে যিকরুল্লাহ তথা আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে; এবং যে কেউ তেমন করে,তবে ওই সমস্ত লোক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। মুফাসসীরগণের একটি দলের মতে উপরোক্ত আয়াতে “যিকরুল্লাহ” দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামায। সুতরাং যারা নিজের সম্পদ যেমন; μয়-বিμয় বা টাকা-পয়সা অথবা নিজের সন্তান-সন্ততির কারণে নামায ঠিক সময়ে আদায় করার বিষয়ে উদাসিন হয়, তারা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।
অন্য আয়াতে নামায অনাদায়কারীদের সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে: ‘তোমাদেরকে কিসে দোযখে নিয়ে গেছে?’ তারা বলবে, ‘আমরা নামায পড়তাম না।
হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:“বান্দার কাছ থেকে কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম যে আমল সম্পর্কে হিসাব নেয়া হবে, তা হলো তার নামায। যদি তার নামায সঠিক হয় তবে সে মুক্তি ও কল্যাণ পেয়ে যাবে এবং যদি এতে অপূর্ণতা থাকে, তবে সে ব্যক্তি অপদস্থ ও ধ্বংস হয়ে যাবে।”
অন্যত্র ইরশাদ করেন: আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন, যে তা আদায় করলো এবং এর হককে নগণ্য মনে করে এ থেকে কোনটি নষ্ট করলো না, তবে আল্লাহ তায়ালার বদান্যতার দায়িত্বে তার জন্য ওয়াদা রয়েছে যে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং যে তা আদায় করলো না তবে তার জন্য আল্লাহ তায়ালার দয়াময় দায়িত্বে কোন ওয়াদা নেই, চাইলে তাকে আযাব দিবেন, চাইলে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
জামাআতের গুরুত্ব বুঝাতে পবিত্র কুরআনুল করিমে ইরশাদ হচ্ছে: আর নামায কায়েম রাখো ও যাকাত দাও এবং যারা রুকু’ করে তাদের সাথে রুকু’ করো।
মুফাস্সীরগণ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: এই আয়াতে জামাআত সহকারে নামায আদায় করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, ইরশাদ হচ্ছে: নামায আদায়কারীদের সাথে জামাআত সহকারে নামায পড়ো।
কোন অপারগতা ছাড়া জামাআত সহকারে নামায না পড়া এমন এক আমল, যার কারণে কাল কিয়ামতে আযাব ও অপদস্ততা নিয়তিতে পরিণত হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: যে দিন এক ‘সাক্বূ’ (পায়ের গোছা) উন্মূক্ত করা হবে (যার প্রকৃত অর্থ আল্লাহই জানেন) এবং সিজদার প্রতি আহ্বান করা হবে, অতঃপর (যারা) তা করতে পারবে না; তাদের দৃষ্টি অধোমুখী হয়ে থাকবে, হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে এবং নিশ্চয় তাদেরকে দুনিয়ায় সিজদার প্রতি আহ্বান করা হতো (কিন্তু তারা সাড়া দিতো না) যখন তারা সুস্থ ছিলো।
হযরত ইব্রাহিম তাঈমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন: “তা হবে কিয়ামতের দিন, সেই দিন সে লজ্জা এবং অপমানে ডুবে থাকবে, কেননা তাকে দুনিয়ায় যখন সিজদার প্রতি ডাকা হতো তখন সে সুস্থ্য থাকার পরও নামাযে উপস্থিত হতো না।” হযরত কা’বুল আহবার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “মহান প্রতিপালকের শপথ! উপরোক্ত আয়াত জামাআত বর্জনকারীদের জন্যই অবতীর্ণ হয়েছে এবং কোন অপারগতা ছাড়া জামাআত বর্জন কারীদের জন্য এর চেয়ে কঠিন শাস্তি আর কি হতে পারে।”
হযরত আবু উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: “যদি জামাআত সহকারে নামায বজর্ন করা ব্যক্তি এটা জানতো যে, সেই বর্জনকারীর জন্য কি (শাস্তি) রয়েছে? তবে হেঁচড়িয়ে হেঁচড়িয়েও উপস্থিত হয়ে যেতো।”
জামাআত সহকারে নামায পড়াতে যেমনি মুসলমানদের মধ্যে পরস্পর ভালবাসা বৃদ্ধি পায়, তেমনি নামাযের সাওয়াবও অনেক গুণে বেড়ে যায়। অসংখ্য হাদীসে জামাআত সহকারে নামায পড়লে সাওয়াব বৃদ্ধি এবং অনেক নেয়ামতের সুসংবাদও বর্ণিত রয়েছে। আসুন! এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার কয়েকটি বাণী শ্রবণ করি:
১. যে পরিপূর্ণভাবে ওযু করলো, অতঃপর ফরয নামাযের জন্য চলে গেলো এবং ইমামের পেছনে ফরয নামায পড়লো, তার গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
২. আল্লাহ তায়ালা জামাআত সহকারে নামায আদায়কারীকে ভালবাসেন।
৩. জামাআত সহকারে নামায একাকী নামায পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি উত্তম।
৪. যখন বান্দা জামাআত সহকারে নামায পড়ে, অতঃপর আল্লাহ তায়ালার নিকট নিজের চাহিদার প্রার্থনা করে তবে আল্লাহ তায়ালা তার বিষয়ে লজ্জাবোধ করেন যে, বান্দা চাহিদা পূরণ হওয়ার পূর্বে ফিরে যাবে।
সুতরাং জামাআত সহকারে নামায আদায়কারী কতইযে সৌভাগ্যবান, সে জামাআতে অংশগ্রহণ করার কারণে ২৭ (সাতাশ) গুণ বেশি সাওয়াব লাভ করবে, এমন ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা হয়ে যায়, তার দোয়া কবুলিয়্যতের মর্যাদা লাভ করে এবং নামাযের জন্য ঘর থেকে বের হওয়াতে প্রতিটি কদমে নেকী অর্জিত হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত জামাআতের অপেক্ষায় বসে থাকে, তার নামাযের সাওয়াব অর্জিত হতে থাকে। এক কথায় জামাআত সহকারে নামায আদায়কারী সর্বদা উপকারেই থাকে। কিন্তু আফসোস! জামাআতের তোয়াক্কা করা হয়না, বরং নামাযও যদি কাযা হয়ে যায় তবুও কোন দুঃখ হয়না, কিন্তু পূর্ববর্তী বুযুর্গদের অবস্থা এরূপ ছিলো যে, যদি তাঁদের তাকবীরে উলা (অর্থাৎ প্রথম তাকবীর) কখনো ছুটে যেতো তবে তাঁদের এরূপ দুঃখ অনুভূত হতো, যেনো অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে, তাঁরা দুনিয়ায় এবং এতে যা কিছু রয়েছে তা থেকে তাকবীরে উলাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন এবং আসলেও তাই। হযরত ইমাম মুহাম্মদ গাযযালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন: পূর্ববর্তী বুযুর্গদের নিকট নামাযের এরূপ গুরুত্ব ছিলো যে, যদি তাদের মধ্যে কারো তাকবীরে উলা ছুটে যেতো তবে তিনদিন পর্যন্ত এর আফসোস করতে থাকতেন এবং যদি কারো কখনো কোন জামাআত ছুটে যেতো, তবে সাতদিন পর্যন্ত দুঃখ করতেন। হযরত সায়্যিদুনা আবু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর সন্তানকে নসিহত করতে গিয়ে বলেন: বৎস! মসজিদই তোমার ঘর হওয়া উচিৎ, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি, মসজিদ হচ্ছে মুত্তাকীদের ঘর এবং যার ঘর মসজিদ হবে, আল্লাহ তায়ালা তার মাগফিরাত, রহমত এবং জান্নাতের দিকে পুলসিরাতের উপর দিয়ে নিরাপত্তা সহকারে গমনের জামিনদার হয়ে যান।
বুদ্ধিমান সে, যে শুধু নিজেই দ্বীনের বিধানের প্রতি আমলকারী নয় বরং নিজের সন্তানদেরও সুন্নাতের অনুসারী বানায় এবং জামাআত সহকারে নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে বলে। কেননা, সকল ইবাদতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নামায আর এটিই মুক্তির মাধ্যম এবং জান্নাতের চাবি, তাই নামাযের পরিপূর্ণ রক্ষনাবেক্ষন করা উচিৎ ও তা সময় মতো জামাআত সহকারে আদায় করা উচিৎ। সাধারণত দেখা যায় যে, লোকেরা ঘরেই নামায আদায় করে নেয় এবং মসজিদে যাওয়াতে অলসতা করে আর শুধুমাত্র অলসতার কারণে মহান সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। মনে রাখবেন! প্রত্যেক সজ্ঞান, প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন, সক্ষম লোকের উপর জামাআত ওয়াজিব, বিনা কারণে একবারও বর্জনকারী গুনাহগার এবং শাস্তির অধিকারী আর বারবার বর্জন করতে থাকা ফাসিক, স্বাক্ষ্য গ্রহণের অযোগ্য (অর্থাৎ তার স্বাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়) এবং তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে, যদি প্রতিবেশিরা এবিষয়ে চুপ থাকে তবে তারাও গুনাহগার হবে।
হযরত উবাইদুল্লাহ বিন ওমর কাওয়ারিরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:“আমি সর্বদা ইশার নামায জামাআত সহকারে আদায় করেছি, কিন্তু আফসোস! একবার আমার ইশার নামাযের জামাআত ছুটে গেলো। এই কারণেই হলো যে, আমার নিকট একজন মেহমান এলো, আমি তার মেহমানদারীতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ব্যস্ততা সেরে যখন মসজিদে পৌঁছলাম তখন জামাআত শেষ হয়ে গিয়েছিলো। এখন আমি চিন্তা করতে লাগলাম যে, এমন কি কাজ করা যায়, যার দ্বারা এই ক্ষতি পূরণ করে নেয়া যায়। হঠাৎ আমার আল্লাহ তায়ালার হাবীব, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই মহান বাণীটি স্মরণ এলো যে, জামাআত সহকারে নামায একা নামায আদায়কারীর নামায থেকে একুশ (২১) গুণ বেশি মর্যাদাপূর্ণ। অনুরূপভাবে পঁিচশ (২৫) এবং সাতাশ (২৭) গুণ বেশি ফযীলতও বর্ণিত রয়েছে।” আমি চিন্তা করলাম, যদি আমি সাতাশবার নামায পড়ে নিই তবে সম্ভবত জামাআত ছুটে যাওয়াতে যে কমতি রয়ে গেছে তা পুরণ হয়ে যাবে। সুতরাং আমি সাতাশবার ইশার নামায পড়েছি, অতঃপর আমার তন্দ্রাভাব এসে গেলো। আমি নিজেকে কয়েকজন ঘোড়ার আরোহীদের সাথে দেখলাম, আমরা সবাই কোথাও যাচ্ছিলাম। এমন সময় একজন ঘোড়ার আরোহী আমাকে বললো: “তুমি তোমার ঘোড়াকে কষ্ট দিয়ো না, নিশ্চয় তুমি আমাদের সাথে শামিল হতে পারবে না।” আমি বললাম: “আমি আপনাদের সাথে কেন শামিল হতে পারবো না?” বললো: এই জন্য যে, আমরা ইশার নামায জামাআত সহকারে আদায় করেছি।”
যদি কেউ জানতে পারে যে, তার নিকট যে বস্তু রয়েছে, তার শহরে সেটার বিμয়মূল্য এক টাকা কিন্তু তা সাগরের ওপাড়ে গিয়ে বিμি করলে তবে ২৭ টাকায় বিμি করতে পারবে, তবে অবশ্যই ঐ ব্যক্তি সাগরের ওপাড়ে গিয়েই নিজের সম্পদ বিμি করাকে প্রাধান্য দিবে, কেননা ২৭ গুণ লাভ ছেড়ে দেয়া কেইবা পছন্দ করবে? অতিব আশ্চার্যের বিষয় হলো যে, কয়েক কদম হেঁটে মসজিদে জামাআত সহকারে নামায আদায় করাতে ২৭ গুণ সাওয়াব অর্জিত হয় কিন্তু লোকেরা এর তোয়াক্কা না করেই বিনা কারণে জামাআত বর্জন করে থাকে। অথচ সাহাবায়ে কিরামগণের এরূপ অভ্যাস ছিলো যে, জামাআতে অংশগ্রহণ করার জন্য এক মাইল দূর থেকে মসজিদে আসতেন। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে শুনেছি, তিনি বলেন: আমাদের ঘর মসজিদ থেকে দূরে ছিলো, তাই আমরা নিজেদের ঘর বিμি করে দেয়ার মনস্থির করলাম, যেনো আমরা মসজিদের নিকটে এসে যেতে পারি, তখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিষেধ করলেন এবং ইরশাদ করলেন: তোমাদের প্রতিটি কদমের পরিবর্তে সাওয়াব অর্জিত হয়।
সাহাবায়ে কিরামদের মাঝে জামাআত সহকারে নামায আদায় করার কতইনা আগ্রহ ছিলো, আসলেই পাঁচ ওয়াক্তেই এক মাইল দূর থেকে আসা সহজ কাজ নয় আর আনুগত্যের প্রেরণাও দেখুন যে, শুধু এই কারণেই মসজিদে নববী শরীফের নিকটে ঘর কিনেননি, যেনো দূর থেকে আসাতে বেশি সাওয়াব অর্জিত হয়! পক্ষান্তরে আমাদের অবস্থা এরূপ যে, আমাদের ঘরের পাশেই মসজিদ রয়েছে, মসজিদ সামান্য দূর হলেও এবং পায়ে হেটে যাওয়াতে অলসতা হলে গাড়ি, মোটর সাইকেলের মাধ্যমে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, মসজিদেও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা রয়েছে, কিন্তু দূর্ভাগ্যμমে তারপরও জামাআত সহকারে নামায পড়া হয়না। ঐ সকল লোকেরা যারা শুধুমাত্র অলসতার কারণে জামাআত সহকারে নামায আদায় করেনা, তাদের উচিৎ, মনোযোগ সহকারে নি¤েœাক্ত হাদীস শরীফ শ্রবণ করা এবং বারবার এ বিষয়ে চিন্তা করা অলসতা ও উদাসীনতাকে দূর করে নিয়মিত জামাআত সহকারে নামায আদায়ের মানসিকতা তৈরি করা।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েক ওয়াক্ত নামাযে কিছু মানুষকে অনুপস্থিত পেয়ে ইরশাদ করলেন: আমি চাই যে, কোন ব্যক্তিকে আদেশ দিই যে, সে যেনো নামায পড়ায়, অতঃপর আমি ঐ সকল লোকদের নিকট যাই যারা নামায (জামাআত সহকারে) পড়া থেকে বিরত রয়েছে এবং এ কারণে তাদের ঘরকে জ্বালিয়ে দিই। হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন: এখানে বলার বিষয়টি মুনাফিকদের দিকেই নিহিত, কেননা কোন সাহাবী বিনা কারণে জামাআত এবং মসজিদে উপস্থিতি বর্জন করতেন না।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর বলেন: হযরত ওমর ফারুক তাঁর বাগানের দিকে গেলেন, যখন ফিরে আসলেন তখন লোকেরা আসরের নামায আদায় করে নিয়েছিলো, এটা দেখে তিনি পাঠ করলেন এবং বললেন: “আমার আসরের জামাআত ছুটে গেলো, সুতরাং আমি তোমাদের স্বাক্ষী বানালাম যে, আমার বাগানটি মিসকিনদের জন্য সদকা করে দিলাম যেনো এই কাজের কাফফারা হয়ে যায়।”
মনে রাখবেন! ইফতার পার্টি, বিয়ে ও ওলীমার দাওয়াত, ওরশ, ইসালে সাওয়াবের মাহফিল এবং নাতের অনুষ্ঠান ইত্যাদির কারণে ফরয নামায সমূহে মসজিদের জামাআতের তাকবীরে উলা বর্জন করার কোন অনুমতি নেই, এমনকি যে লোকেরা ঘর বা হল অথবা বাংলোর কম্পাউন্ডে তারাবীর জামাআতের ব্যবস্থা করে থাকে এবং নিকটেই মসজিদ বিদ্যমান তবে তাদের উপরও ওয়াজিব যে, প্রথমে ফরয নামায জামাআতে তাকবীরে উলার সাথে মসজিদে আদায় করা। যারা শরয়ী কারণ ব্যতিরেকে ক্ষমতা থাকা স্বত্বেও ফরয নামায মসজিদে জামাআতের সাথে আদায় করে না, তাদের ভয় করা উচিৎ। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “যার এটা পছন্দ যে, কাল আল্লাহ তায়ালার সাথে মুসলমান হয়েই সাক্ষাৎ করবে তবে সে যেনো এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায (জামাআত সহকারে) সেখানে নিয়মিত করে, যেখানে আযান দেয়া হয়, কেননা আল্লাহ তায়ালা তোমাদের নবীর জন্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হিসেবে নির্দিষ্ট করেছেন এবং এই (জামাআত সহকারে) নামাযও সন্নাতে মুয়াক্কাদা আর যদি তোমরা নিজের ঘরে নামায পড়ে নাও, তবে তোমরা তোমাদের নবী এর সুন্নাত ছেড়ে দিলে এবং যদি তোমাদের নবীর সুন্নাত ছেড়ে দাও, তবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।” এই হাদীস শরীফ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, জামাআতে নামায আদায়কারীদের উত্তম পরিণতি হবে এবং যারা শরয়ী কারণে ছাড়া জামাআত বর্জন করবে তাদের পরিণতি অত্যন্ত মন্দ হবার আশংকা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আলা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত শাহ ইমাম আহমদ রেযা খাঁন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন: যদি আযান শুনে মসজিদে প্রবেশ করার জন্য ইকামতের অপেক্ষা করতে থাকে তবে গুনাহগার হবে। তিনি আরো বলেন:“যে ব্যক্তি আযান শুনে ঘরে ইকামতের জন্য অপেক্ষা করে, তার স্বাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।”
হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রশ্ন দাঁড় করেন যে, জামাআত সহকারে নামায কেন আদায় করা হয়, এতে হিকমত কি? মসজিদে উপস্থিত কেন হতে হয়? অতঃপর এর উত্তর দিতে গিয়ে নিজেই বলেন: জামাআতে দ্বীনি ও দুনিয়াবী অনেক হিকমত রয়েছে, দুনিয়াবী হিকমত তো এটাই যে, জামাআতের বরকতে জাতির মধ্যে শৃংখলা বজায় থাকে যে, মুসলমানগণ তাদের সকল কাজের জন্য, ইমামের ন্যায় নেতা এবং আমীর খুঁজে নেয়, অতঃপর আমীরের এরূপ আনুগত্য করবে যেমন মুক্তাদী ইমামের (আনুগত্য করে), জামাআত দ্বারা পরস্পর একতা বৃদ্ধি পায়, প্রতিদিন পাঁচবারের সাক্ষাত ও সালাম দোয়া মনের শত্রুতাকে দূর করে দেয়, জাতিতে সময়ের নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস হয়ে যায় যে, সকলেই জামাআতের সময়ে দৌড়ে আসে, জামাআতের মাধ্যমে অহঙ্কারীদের অহঙ্কার দূর হয়ে যায় যে, এখানে বাদশাহকেও গরীবের সাথে দাঁড়াতে হয়, তাছাড়া মসজিদ হচ্ছে মুসলমানদের মিলন সাক্ষাৎ স্থল, যেখানে একত্র হয়ে মুসলমানরা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ করতে পারে, যেনো মসজিদে প্রতিদিন পাঁচবার কনফারেন্স হয়ে থাকে, দ্বীনি উপকারীতা হলো যে, যদি জামাআতে একজনের নামায কবুল হয়ে যায় তবে সবার কবুল হয়ে যাবে, জামাআতে যেনো মুসলমানদের প্রতিনিধিদল আল্লাহ তায়ালার দরবারে উপস্থিত হয় এবং প্রকাশ্য যে, শাসকের দরবারে একাকীর পরিবর্তে সম্মিলিত ভাবে যাওয়া বেশি সম্মানের হয়ে থাকে, জামাআতে মানুষ আল্লাহ তায়ালার আদালতে উকিল অর্থাৎ ইমামের মাধ্যমে আরয করে থাকে, যার কারণে কথার মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে যায়, মসজিদের দিকে আসা যাওয়ায় প্রতিটি কদমেই দশটি করে নেকী অর্জিত হয়, জামাআত মানুষকে ধর্মীয় নেতা, ওলামা ও সূফীদের আদব করা শেখায়।
আমাদের মধ্যে এমন লোকের আধিক্য, যারা বাজারের রঙ তামাশায় বসে থাকে, অফিসে ব্যস্ততার নামে সময় অতিবাহিত করে দেয়, আযান হয়ে যায়, জামাআত শেষ হয়ে যায় এবং তাদের এতটুকু অনুভূতিও পর্যন্ত থাকে না এবং যারা নামায পড়েও তবে জামাআত বিহীন, অনেক সময় কথা বলতে বলতে বা কাজকর্ম করতে করতে জামাআত তো জামাআত নামায পর্যন্ত ছেড়ে দেয় কিন্তু আহ! এর কোন আফসোস পর্যন্ত হয়না। আমাদেরও উচিৎ, আমরাও যেনো আমাদের মাঝে জামাআত সহকারে নামাযের গুরুত্ব এবং এর ভালবাসা সৃষ্টি করি আর নিজের সন্তানদেরও বাল্যকাল থেকেই জামাআত সহকারে নামায পড়াতে অভ্যস্ত করি।