ওযীফা-ই গাউসিয়া
ওযীফা-ই গাউসিয়া
সংকলনে
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান
মহাপরিচালক, আনজুমান রিসার্চ সেন্টার
আলমগীর খানক্বাহ্ শরীফ, ষোলশহর, চট্টগ্রাম
প্রকাশকাল
১২ রবিউল আউয়াল, ১৪৩৮ হিজরি
২৮ অগ্রহায়ণ, ১৪২৩ বাংলা
১২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ইংরেজি
সর্বস্বত্ত্ব প্রকাশকের
কম্পোজ-সেটিং
মুহাম্মদ ইকবাল উদ্দীন
হাদিয়া: ১৩০/- টাকা মাত্র
প্রকাশনায়
আন্জুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট [প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ]
৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা) দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০, বাংলাদেশ। ফোন : ০৩১-২৮৫৫৯৭৬,
সূচিপত্র
প্রকাশকের কথা ০৫
সূরা ইয়াসীন ০৭
সূরা র্আ রাহ্মান ২৮
সূরা ওয়াক্বি‘আহ্ ৪২
সূরা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ৫৫
সূরা মুল্ক ৭২
সূরা মুয্যাম্মিল ৮২
সূরা কাফিরূন ৮৯
সূরা ইখলাস ৯০
সূরা ফালাক্ব ৯১
সূরা নাস ৯২
আসমা-ই হুস্না ৯৩
আসমা-ই নবভী ৯৭
আসমা-ই ইয়ায্দাহ্ ১০১
দো‘আ-ই গঞ্জে আরশ ১০৯
দো‘আ-ই ক্বাদাহ্ ১২৬
দো‘আ-ই হাবীবী ১৪১
দো‘আ-ই জামীলাহ্ ১৪৬
আহ্দনামা ১৫৬
দুরূদ-ই আকবার ১৫৯
দুরূদ-ই তাজ ১৮০
দুরূদ-ই হাজারী ১৮৫
দুরূদ-ই লাখী ১৮৮
দুরূদ-ই তুনাজ্জীনা ১৯৭
ইসমে আ’যম ১৯৯
হাফত-ই হায়কাল ২০১
আয়াতুল কুরসী ২১৪
আয়াত-ই শেফা ২১৬
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত ২১৮
কলেমাসমূহ ২২০
সালাতুল হাজত ২২৩
বালাগাল ‘উলা ২২৪
দুরূদ-ই নূরিয়া ২২৪
দুরূদ-ই শেফা ২২৫
না’দে আলী শরীফ ২২৬
চেহেল কাফ ২২৭
সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার ২২৭
দুরূদ-ই গাউসিয়া ২২৮
দুরূদ-ই সিলসিলাহ্-ই ক্বাদেরিয়া ২২৮
আযানের দো‘আ ২২৮
নামাযের ফযীলত ও আরকান-আহকাম ২২৯
নামাযে গাউসিয়া ২২৯
তাহাজ্জুদের নামায ২৩০
ফরয নামাযের পর যিক্র ও দো‘আ ২৩০
মুনাজাত ২৩২
হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্বের মুনাজাত ২৩৩
ইলাহী তুবতু মিন কুল্লিল মা‘আসী ২৩৬
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা (র.) -এর মুনাজাত ২৩৭
ইলাহী বহক্বক্বে বনী ফাত্বিমা ২৪০
আয় খালিক্বে হার বুলন্দী ২৪০
হুযূর গাউসে পাক সমীপে ২৪৩
পানি পান করার সাতটি সুন্নাত ২৪১
লী- খামসাতুন… ২৪১
না’ত শরীফ: যে রহমত কুন নযর ২৪২
ক্বসীদাহ্-ই বোর্দাহ্ শরীফ থেকে ২৪৪
মীলাদ শরীফ ২৫২
ক্বিয়াম ২৫৩
প্রকাশকের কথা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লী ওয়া নুসাল্লিমু ‘আলা হাবীবিহিল করীম
ওয়া ‘আলা- আলিহী- ওয়া সাহ্বিহী আজমা‘ঈন।
আল্লাহ্ জাল্লা শানুহূর মেহেরবাণীতে, মু’মিন-মুসলমানগণ তাঁদের উপর আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে আরোপিত ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত-ই মুআক্কাদাহ্ ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী সুম্পন্ন করার সাথে সাথে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক তথা নিয়মিতভাবে ক্বোরআন মজীদের অধিকতর বরকতময় সূরাদি, আয়াতসমূহসহ বিভিন্ন বরকতমন্ডিত দো‘আসমূহ পাঠ এবং বিভিন্ন নফল নামায আদায় আর বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে ক্বোরআন-সুন্নাহ্ সম্মত অতি ফলপ্রসূ আমলসমূহ সম্পন্ন করতে একান্ত আগ্রহী হন। আলহামদুলিল্লাহ্। তাঁরা এসব ইবাদত-বন্দেগী কমবেশী সুসম্পন্ন করেও থাকেন।
বলাবাহুল্য, তাঁরা এসব সূরা, আয়াত, দো‘আ ও আমল বিশুদ্ধভাবে সংকলিত হয়েছে এমন কিতাব তথা পুস্তকের শরণাপন্ন হন। এমন কিতাব বা পুস্তককে সাধারণত ‘ওয়াযাইফ’ বা ‘ওযীফা’ বলা হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলিম সাধারণের এ চাহিদা পূরণের জন্য এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকাশক ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পরিসর ও সাইজের ‘ওযীফা’ বা ‘ওযা-ইফ’ (পুস্তক) প্রকাশ করে আসছেন। এ ওযীফা-পুস্তক একদিকে পাঠক সমাজ নিজেরাও সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করেন, তেমনি অন্যদিকে নিয়্যৎ মান্নত করে, সাওয়াবের উদ্দেশ্যে ক্রয় করে বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, মাযার ও ইবাদতখানায় দান কিংবা ওয়াক্বফ করে থাকেন। দীর্ঘকাল যাবৎ বিভিন্ন লেখক, সংকলক ও প্রকাশক অতি নিষ্ঠার সাথে ‘ওযীফা’ লিখে ও প্রকাশ করে মুসলিম সমাজে সরবরাহ্ করার অতি পুণ্যময় কাজে আত্মনিয়োগ করে এসেছেন; কিন্তু ক্রমশ এ বিষয়টাও বিভিন্নভাবে কলুষিত হতে দেখা গেছে। চাহিদার আধিক্য, পাঠক সমাজ ও দাতা বা ওয়াক্বফকারীদের অসতর্কতার সুযোগে ‘ওযীফা’ প্রকাশের স্বচ্ছতায়ও ব্যত্যয় ঘটতে থাকে। যেনতেনভাবে তা প্রকাশ করা হচ্ছে, এমনকি সূরা, আয়াত ও দো‘আগুলোর অনুবাদে ইসলামের প্রকৃত আদর্শ সুন্নী মতাদর্শের পরিপন্থী মতবাদ প্রকাশ ও প্রচার করা হচ্ছে। কোন কোন বিশুদ্ধ ও সর্বজন স্বীকৃত দো‘আ ও ক্বসীদা ইত্যাদিতে অতি আপত্তিকর পরিবর্তন-পরিবর্দ্ধনও করা হচ্ছে। ফলে পাঠক সমাজ ক্ষেত্র ভেদে সাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ্, উপকারের পরিবর্তে অপকারিতার শিকার হচ্ছেন। (না‘ঊযুবিল্লাহ্)
এহেন নাজুক পরিস্থিতি ও অবস্থার নিরসন করে সঠিক, ফলপ্রসূ ও বরকতমন্ডিত বিশুদ্ধ ওযীফা-ওয়াযা-ইফ প্রকাশ করাও এখন সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, দ্বীনী কিতাব-পুস্তক প্রকাশনা ও বিলি-বন্টন তো অতি উত্তম সদক্বাহ্-ই জারিয়াহ্ হিসেবে সর্বজন বিদিত হয়ে আসছে। সুতরাং আমাদের আন্জুমান ও গাউসিয়া কমিটিরই বিশেষ ব্যক্তিত্ব, সুন্নী মতাদর্শের জন্য একান্ত নিবেদিতপ্রাণ আলহাজ্ব আনোয়ারুল হক সাহেব একটি যুগোপযোগী, ফলপ্রসূ ও বরকতমন্ডিত ‘ওযীফা’ প্রকাশের প্রতি এগিয়ে আসেন। আরো সুখের বিষয় যে, আহলে সুন্নাতের লেখনী ও প্রকাশনা অঙ্গনের স্বনামধন্য বিজ্ঞ আলিম-ই দ্বীন ও আমাদের ‘আনজুমান রিসার্চ সেন্টার’র মহাপরিচালক আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান সাহেব ওযীফাটার সংকলন, প্রকাশনার কাজ অতি গুরুত্ব ও যতœসহকারে সমাধা করেছেন। একটা পূর্ণাঙ্গ ওযীফা হিসেবে এতে প্রায় সব ক’টি সূরা, আয়াত, দো‘আ, ক্বসীদা ও মুনাজাত ইত্যাদি সন্নিবিষ্ট হয়েছে, যেগুলো নিয়মিতভাবে পাঠ করলে প্রতিটি পাঠক এবং এর নিষ্ঠাপূর্ণভাবে বিলি বন্টনকারী উভয় জাহানের আশাতীতভাবে উপকৃত হবেন। জনাব আলহাজ্ব আনোয়ারুল হক সাহেবের সৌজন্যে ‘আনোয়ারুল ওয়াযা-ইফ’ (ওযীফার আলো) নামে ওযীফাটা অতি উন্নতমানের অবয়বে ও বৃহৎ পরিসরে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট (প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ) প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ কাজটা সুসম্পন্ন করেছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে জনাব আলহাজ্ব আনোয়ারুল হক সাহেব, জনাব সংকলক এবং আরো যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, আমরা তাদের সবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ওযীফা-পুস্তকটা মুসলিম সমাজকে সেটার ‘আনওয়ার’ (আলোরাশি) বিকিরিত করে ধন্য করবে, তাতে আমরা নিশ্চিত বিশ্বাস করি, আল্লাহ্ ক্ববূল করুন, আ-মী-ন।
আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের পক্ষে
আলহাজ্ব মুহাম্মদ মহসিন-সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট
আলহাজ্ব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন-সেক্রেটারি জেনারেল
সূরা ইয়াসীনের ফযীলত
১. পবিত্র হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যদি কোন ব্যক্তি সূরা ইয়াসীন পড়ে রাতে শয়ন করে, সে যেন নিষ্পাপ অবস্থায় সকালে ঘুম থেকে উঠলো। সর্বদা যে ব্যক্তি এ সূরা পড়বে, ক্বিয়ামতের দিন এ সূরা তার জন্য শাফা‘আত করবে। [আবূ দা‘ঊদ, ইবনে মাজাহ্, আহমদ] ২. রাসূল-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে কেউ নিয়মিতভাবে এ সূরা পড়বে জান্নাতের ৮টি দরজায় তার জন্য খোলা থাকবে।
৩. সকল বস্তুরই একটা হৃদয় (রূহ) আছে। ক্বোরআন শরীফের হৃদয় হল সূরা ইয়াসীন। [তিরমিযী] ৪. একবার সূরা ইয়াসীন পড়লে দশবার ক্বোরআন খতমের সাওয়াব পাওয়া যায়। [তিরমিযী] ৫. প্রত্যেহ সকালে একবার করে এ সূরা তেলাওয়াত করলে তার ওই দিনের সকল প্রকার মাক্বসূদ পূর্ণ হয়। [দারেমী] ৬. এ সূরা মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট পড়লে মৃত্যু-যন্ত্রণা লাঘব হয়। [আহমদ] ৭. জিনের আসর প্রাপ্ত ব্যক্তিকে বা পাগলকে এ সূরা পড়ে ফুঁক দিলে আসর দূর হয় ও পাগল ব্যক্তি আরোগ্য লাভ করে।
৮. সূরা ইয়াসীনের ৭ মুবীন পড়ে ৭ বার কালজিরায় ফুঁক দিয়ে খেলে যে কোন কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।
সূরা ইয়াসী-ন,
আয়াত-৮৩, রুকু-৫, মক্কায় অবতীর্ণ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
یٰسٓۚ(۱) وَ الْقُرْاٰنِ الْحَكِیْمِۙ(۲) اِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِیْنَۙ(۳) عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍؕ(۴) تَنْزِیْلَ الْعَزِیْزِ الرَّحِیْمِۙ(۵) لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّاۤ اُنْذِرَ اٰبَآؤُهُمْ فَهُمْ غٰفِلُوْنَ(۶) لَقَدْ حَقَّ الْقَوْلُ عَلٰۤى اَكْثَرِهِمْ فَهُمْ لَا یُؤْمِنُوْنَ(۷) اِنَّا جَعَلْنَا فِیْۤ اَعْنَاقِهِمْ اَغْلٰلًا فَهِیَ اِلَى الْاَذْقَانِ فَهُمْ مُّقْمَحُوْنَ(۸) وَ جَعَلْنَا مِنْۢ بَیْنِ اَیْدِیْهِمْ سَدًّا وَّ مِنْ خَلْفِهِمْ سَدًّا فَاَغْشَیْنٰهُمْ فَهُمْ لَا یُبْصِرُوْنَ(۹) وَ سَوَآءٌ عَلَیْهِمْ ءَاَنْذَرْتَهُمْ اَمْ لَمْ تُنْذِرْهُمْ لَا یُؤْمِنُوْنَ(۱۰) اِنَّمَا تُنْذِرُ مَنِ اتَّبَعَ الذِّكْرَ وَ خَشِیَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَیْبِۚ-فَبَشِّرْهُ بِمَغْفِرَةٍ وَّ اَجْرٍ كَرِیْمٍ(۱۱) اِنَّا نَحْنُ نُحْیِ الْمَوْتٰى وَ نَكْتُبُ مَا قَدَّمُوْا وَ اٰثَارَهُمْۣؕ-وَ كُلَّ شَیْءٍ اَحْصَیْنٰهُ فِیْۤ اِمَامٍ مُّبِیْنٍ۠(۱۲) وَ اضْرِبْ لَهُمْ مَّثَلًا اَصْحٰبَ الْقَرْیَةِۘ-اِذْ جَآءَهَا الْمُرْسَلُوْنَۚ(۱۳) اِذْ اَرْسَلْنَاۤ اِلَیْهِمُ اثْنَیْنِ فَكَذَّبُوْهُمَا فَعَزَّزْنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوْۤا اِنَّاۤ اِلَیْكُمْ مُّرْسَلُوْنَ(۱۴) قَالُوْا مَاۤ اَنْتُمْ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَاۙ-وَ مَاۤ اَنْزَلَ الرَّحْمٰنُ مِنْ شَیْءٍۙ-اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا تَكْذِبُوْنَ(۱۵) قَالُوْا رَبُّنَا یَعْلَمُ اِنَّاۤ اِلَیْكُمْ لَمُرْسَلُوْنَ(۱۶) وَ مَا عَلَیْنَاۤ اِلَّا الْبَلٰغُ الْمُبِیْنُ(۱۷) قَالُوْۤا اِنَّا تَطَیَّرْنَا بِكُمْۚ-لَىٕنْ لَّمْ تَنْتَهُوْا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَ لَیَمَسَّنَّكُمْ مِّنَّا عَذَابٌ اَلِیْمٌ(۱۸) قَالُوْا طَآىٕرُكُمْ مَّعَكُمْؕ-اَىٕنْ ذُكِّرْتُمْؕ-بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُوْنَ(۱۹) وَ جَآءَ مِنْ اَقْصَا الْمَدِیْنَةِ رَجُلٌ یَّسْعٰى قَالَ یٰقَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِیْنَۙ(۲۰) اتَّبِعُوْا مَنْ لَّا یَسْــٴَـلُكُمْ اَجْرًا وَّ هُمْ مُّهْتَدُوْنَ(۲۱) وَ مَا لِیَ لَاۤ اَعْبُدُ الَّذِیْ فَطَرَنِیْ وَ اِلَیْهِ تُرْجَعُوْنَ(۲۲) ءَاَتَّخِذُ مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةً اِنْ یُّرِدْنِ الرَّحْمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّیْ شَفَاعَتُهُمْ شَیْــٴًـا وَّ لَا یُنْقِذُوْنِۚ(۲۳) اِنِّیْۤ اِذًا لَّفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ(۲۴) اِنِّیْۤ اٰمَنْتُ بِرَبِّكُمْ فَاسْمَعُوْنِؕ(۲۵) قِیْلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَؕ-قَالَ یٰلَیْتَ قَوْمِیْ یَعْلَمُوْنَۙ(۲۶) بِمَا غَفَرَ لِیْ رَبِّیْ وَ جَعَلَنِیْ مِنَ الْمُكْرَمِیْنَ(۲۷) وَ مَاۤ اَنْزَلْنَا عَلٰى قَوْمِهٖ مِنْۢ بَعْدِهٖ مِنْ جُنْدٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَ مَا كُنَّا مُنْزِلِیْنَ(۲۸) اِنْ كَانَتْ اِلَّا صَیْحَةً وَّاحِدَةً فَاِذَا هُمْ خٰمِدُوْنَ(۲۹)
یٰحَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِۣۚ-مَا یَاْتِیْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ یَسْتَهْزِءُوْنَ(۳۰) اَلَمْ یَرَوْا كَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنَ الْقُرُوْنِ اَنَّهُمْ اِلَیْهِمْ لَا یَرْجِعُوْنَؕ(۳۱) وَ اِنْ كُلٌّ لَّمَّا جَمِیْعٌ لَّدَیْنَا مُحْضَرُوْنَ۠(۳۲) وَ اٰیَةٌ لَّهُمُ الْاَرْضُ الْمَیْتَةُ ۚۖ-اَحْیَیْنٰهَا وَ اَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ یَاْكُلُوْنَ(۳۳) وَ جَعَلْنَا فِیْهَا جَنّٰتٍ مِّنْ نَّخِیْلٍ وَّ اَعْنَابٍ وَّ فَجَّرْنَا فِیْهَا مِنَ الْعُیُوْنِۙ(۳۴) لِیَاْكُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖۙ-وَ مَا عَمِلَتْهُ اَیْدِیْهِمْؕ-اَفَلَا یَشْكُرُوْنَ(۳۵) سُبْحٰنَ الَّذِیْ خَلَقَ الْاَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنْۢبِتُ الْاَرْضُ وَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَ مِمَّا لَا یَعْلَمُوْنَ(۳۶) وَ اٰیَةٌ لَّهُمُ الَّیْلُ ۚۖ-نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَاِذَا هُمْ مُّظْلِمُوْنَۙ(۳۷) وَ الشَّمْسُ تَجْرِیْ لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَاؕ-ذٰلِكَ تَقْدِیْرُ الْعَزِیْزِ الْعَلِیْمِؕ(۳۸) وَ الْقَمَرَ قَدَّرْنٰهُ مَنَازِلَ حَتّٰى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِیْمِ(۳۹) لَا الشَّمْسُ یَنْۢبَغِیْ لَهَاۤ اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَ لَا الَّیْلُ سَابِقُ النَّهَارِؕ-وَ كُلٌّ فِیْ فَلَكٍ یَّسْبَحُوْنَ(۴۰) وَ اٰیَةٌ لَّهُمْ اَنَّا حَمَلْنَا ذُرِّیَّتَهُمْ فِی الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِۙ(۴۱) وَ خَلَقْنَا لَهُمْ مِّنْ مِّثْلِهٖ مَا یَرْكَبُوْنَ(۴۲) وَ اِنْ نَّشَاْ نُغْرِقْهُمْ فَلَا صَرِیْخَ لَهُمْ وَ لَا هُمْ یُنْقَذُوْنَۙ(۴۳) اِلَّا رَحْمَةً مِّنَّا وَ مَتَاعًا اِلٰى حِیْنٍ(۴۴) وَ اِذَا قِیْلَ لَهُمُ اتَّقُوْا مَا بَیْنَ اَیْدِیْكُمْ وَ مَا خَلْفَكُمْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ(۴۵) وَ مَا تَاْتِیْهِمْ مِّنْ اٰیَةٍ مِّنْ اٰیٰتِ رَبِّهِمْ اِلَّا كَانُوْا عَنْهَا مُعْرِضِیْنَ(۴۶) وَ اِذَا قِیْلَ لَهُمْ اَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّٰهُۙ-قَالَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَنُطْعِمُ مَنْ لَّوْ یَشَآءُ اللّٰهُ اَطْعَمَهٗۤ ﳓ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا فِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ(۴۷) وَ یَقُوْلُوْنَ مَتٰى هٰذَا الْوَعْدُ اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِیْنَ(۴۸) مَا یَنْظُرُوْنَ اِلَّا صَیْحَةً وَّاحِدَةً تَاْخُذُهُمْ وَ هُمْ یَخِصِّمُوْنَ(۴۹) فَلَا یَسْتَطِیْعُوْنَ تَوْصِیَةً وَّ لَاۤ اِلٰۤى اَهْلِهِمْ یَرْجِعُوْنَ۠(۵۰) وَ نُفِخَ فِی الصُّوْرِ فَاِذَا هُمْ مِّنَ الْاَجْدَاثِ اِلٰى رَبِّهِمْ یَنْسِلُوْنَ(۵۱) قَالُوْا یٰوَیْلَنَا مَنْۢ بَعَثَنَا مِنْ مَّرْقَدِنَاﱃ هٰذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمٰنُ وَ صَدَقَ الْمُرْسَلُوْنَ(۵۲) اِنْ كَانَتْ اِلَّا صَیْحَةً وَّاحِدَةً فَاِذَا هُمْ جَمِیْعٌ لَّدَیْنَا مُحْضَرُوْنَ(۵۳) فَالْیَوْمَ لَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَیْــٴًـا وَّ لَا تُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ(۵۴) اِنَّ اَصْحٰبَ الْجَنَّةِ الْیَوْمَ فِیْ شُغُلٍ فٰكِهُوْنَۚ(۵۵) هُمْ وَ اَزْوَاجُهُمْ فِیْ ظِلٰلٍ عَلَى الْاَرَآىٕكِ مُتَّكِــٴُـوْنَ (۵۶) لَهُمْ فِیْهَا فَاكِهَةٌ وَّ لَهُمْ مَّا یَدَّعُوْنَۚۖ(۵۷) سَلٰمٌ- قَوْلًا مِّنْ رَّبٍّ رَّحِیْمٍ(۵۸) وَ امْتَازُوا الْیَوْمَ اَیُّهَا الْمُجْرِمُوْنَ(۵۹)
اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَیْكُمْ یٰبَنِیْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّیْطٰنَۚ-اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِیْنٌۙ(۶۰) وَّ اَنِ اعْبُدُوْنِیْﳳ-هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِیْمٌ(۶۱) وَ لَقَدْ اَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلًّا كَثِیْرًاؕ-اَفَلَمْ تَكُوْنُوْا تَعْقِلُوْنَ(۶۲) هٰذِهٖ جَهَنَّمُ الَّتِیْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ(۶۳) اِصْلَوْهَا الْیَوْمَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ(۶۴) اَلْیَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰۤى اَفْوَاهِهِمْ وَ تُكَلِّمُنَاۤ اَیْدِیْهِمْ وَ تَشْهَدُ اَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا یَكْسِبُوْنَ(۶۵) وَ لَوْ نَشَآءُ لَطَمَسْنَا عَلٰۤى اَعْیُنِهِمْ فَاسْتَبَقُوا الصِّرَاطَ فَاَنّٰى یُبْصِرُوْنَ(۶۶) وَ لَوْ نَشَآءُ لَمَسَخْنٰهُمْ عَلٰى مَكَانَتِهِمْ فَمَا اسْتَطَاعُوْا مُضِیًّا وَّ لَا یَرْجِعُوْنَ۠(۶۷) وَ مَنْ نُّعَمِّرْهُ نُنَكِّسْهُ فِی الْخَلْقِؕ-اَفَلَا یَعْقِلُوْنَ(۶۸) وَ مَا عَلَّمْنٰهُ الشِّعْرَ وَ مَا یَنْۢبَغِیْ لَهٗؕ-اِنْ هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ وَّ قُرْاٰنٌ مُّبِیْنٌۙ(۶۹) لِّیُنْذِرَ مَنْ كَانَ حَیًّا وَّ یَحِقَّ الْقَوْلُ عَلَى الْكٰفِرِیْنَ(۷۰) اَوَ لَمْ یَرَوْا اَنَّا خَلَقْنَا لَهُمْ مِّمَّا عَمِلَتْ اَیْدِیْنَاۤ اَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مٰلِكُوْنَ(۷۱) وَ ذَلَّلْنٰهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوْبُهُمْ وَ مِنْهَا یَاْكُلُوْنَ(۷۲) وَ لَهُمْ فِیْهَا مَنَافِعُ وَ مَشَارِبُؕ-اَفَلَا یَشْكُرُوْنَ(۷۳) وَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ اٰلِهَةً لَّعَلَّهُمْ یُنْصَرُوْنَؕ(۷۴) لَا یَسْتَطِیْعُوْنَ نَصْرَهُمْۙ-وَ هُمْ لَهُمْ جُنْدٌ مُّحْضَرُوْنَ(۷۵) فَلَا یَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْۘ-اِنَّا نَعْلَمُ مَا یُسِرُّوْنَ وَ مَا یُعْلِنُوْنَ(۷۶) اَوَ لَمْ یَرَ الْاِنْسَانُ اَنَّا خَلَقْنٰهُ مِنْ نُّطْفَةٍ فَاِذَا هُوَ خَصِیْمٌ مُّبِیْنٌ(۷۷) وَ ضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَّ نَسِیَ خَلْقَهٗؕ-قَالَ مَنْ یُّحْیِ الْعِظَامَ وَ هِیَ رَمِیْمٌ(۷۸) قُلْ یُحْیِیْهَا الَّذِیْۤ اَنْشَاَهَاۤ اَوَّلَ مَرَّةٍؕ-وَ هُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِیْمُۙﰳ(۷۹) الَّذِیْ جَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الشَّجَرِ الْاَخْضَرِ نَارًا فَاِذَاۤ اَنْتُمْ مِّنْهُ تُوْقِدُوْنَ(۸۰) اَوَ لَیْسَ الَّذِیْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ بِقٰدِرٍ عَلٰۤى اَنْ یَّخْلُقَ مِثْلَهُمْﳳ-بَلٰىۗ-وَ هُوَ الْخَلّٰقُ الْعَلِیْمُ(۸۱) اِنَّمَاۤ اَمْرُهٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَیْــٴًـا اَنْ یَّقُوْلَ لَهٗ كُنْ فَیَكُوْنُ(۸۲) فَسُبْحٰنَ الَّذِیْ بِیَدِهٖ مَلَكُوْتُ كُلِّ شَیْءٍ وَّ اِلَیْهِ تُرْجَعُوْنَ۠(۸۳)
আল্লাহর নামে আরম্ভ, যিনি পরম দয়ালু, করুণাময়
তরজমা: ১. ইয়া-সীন, ২. হিকতময় ক্বোরআনের শপথ; ৩. নিশ্চয় আপনি প্রেরিত, ৪. সরল পথের উপর। সম্মানিত, দয়াময়ের অবতীর্ণ; যাতে আপনি এ সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন, যার বাপ-দাদাকে সতর্ক করা হয়নি। সুতরাং তারা গাফিল। নিশ্চয় তাদের অধিকাংশের উপর বাণী অবধারিত হয়েছে; সুতরাং তারা ঈমান আনবে না, আমি তাদের ঘাড়সমূহে বেড়ী পরিয়ে দিয়েছি যে, সেগুলো থুতনী পর্যন্ত পৌঁছেছে, সুতরাং তারা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে রয়েছে এবং আমি তাদের সম্মুখে প্রাচীর স্থাপন করেছি এবং তাদের পেছনে একটা প্রাচীর। আর তাদেরকে উপর থেকে আবৃত করে দিয়েছি। সুতরাং তারা কিছুই দেখতে পায়না এবং তাদের পক্ষে এক সমান আপনি- তাদেরকে সতর্ক করুন কিংবা না-ই করুন। তারা ইমান আনবে না। আপনি তো তাকেই সতর্ক করেছেন, যে উপদেশ অনুযায়ী চলে এবং পরম দয়ালুকে না দেখে ভয় করে। সুতরাং তাকে ক্ষমা ও সম্মানজনক পুরস্কারের সুসংবাদ দিন। নিশ্চয় আমি মৃতদেরকে জীবিত করবো এবং আমি লিপিবদ্ধ করছি যা তারা অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং যে সব নিদর্শন পেছনে রেখে গেছে এবং প্রত্যেক বস্তু আমি গণনা করে রেখেছি এক বর্ণনাকারী কিতাবে। এবং তাদের নিকট নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করো ওই শহরবাসীদের যখন তাদের নিকট প্রেরিত পুরুষগণ এসেছিলো। যখন আমি তাদের প্রতি দু’জনকে পাঠিয়েছিলাম, অতঃপর তারা তাদেরকে অস্বীকার করেছে, অতঃপর আমি তৃতীয় দ্বারা শক্তিশালী করেছি, তখন তারা সবাই বললো, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।’ বললো, ‘তোমরা তো নও, কিন্তু আমাদের মতো মানুষ এবং পরম দয়ালু কিছুই অবতীর্ণ করেননি। তোমরা নিরেট মিথ্যুক।’ তারা বললো, ‘আমাদের প্রতিপালক জানেন যে, নিঃসন্দেহে অবশ্যই আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।’ এবং আমাদের দায়িত্ব নয়, কিন্তু সুস্পষ্টরূপে পৌঁছিয়ে দেয়া। তারা বললো, ‘আমরা তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ মনে করি, নিশ্চয় যদি তোমরা ফিরে না আসো, তাহলে অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে পাথর মেরে হত্যা করবো এবং নিশ্চয় আমাদের হাতে তোমাদের উপর বেদনাদায়ক শাস্তি আপতিত হবে। তারা বললো, ‘তোমাদের অমঙ্গল তো তোমাদের সাথে। তোমরা কি এরই উপর ক্ষেপে উঠছো যে, তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া হয়েছে? বরং তোমরা সীমা লঙ্ঘনকারী লোক।’ এবং শহরের শেষ প্রান্ত থেকে একজন পুরুষ ছুটে আসলো, বললো, ‘হে আমার সম্প্রদায়, প্রেরিত পুরুষগণের অনুসরণ করো! এমন লোকদের অনুসরণ করো, যারা তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চান না এবং তাঁরা সৎপথের উপর রয়েছেন এবং আমার কি হলো যে, তাঁর ইবাদত করবো না, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন? এবং তাঁরই দিকে তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। আমি কি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য খোদাও স্থির করবো? যদি পরম দয়ালু আমার কোন ক্ষতি চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোন কাজে আসবে না এবং না আমাকে বাঁচাতে পারবে; নিশ্চয় তখন তো আমি সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে হবো। নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতিপালকের উপর ঈমান এনেছি। সুতরাং আমার কথা শোন।’ তাকে বলা হলো, ‘জান্নাতে প্রবেশ করো!’ বললো, ‘কোন মতে আমার সম্প্রদায় যদি জানতো- কীভাবে আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন!’ এবং আমি তারপর তার সম্প্রদায়ের উপর আসমান থেকে বাহিনী অবতীর্ণ করিনি এবং না আমার সেখানে কোন বাহিনী অবতীর্ণ করার (প্রয়োজন) ছিলো। তা তো কেবল একটা বিকট শব্দ ছিলো, তখনই তারা নির্বাপিত হয়ে রয়ে গেলো। এবং বলা হলো, ‘হায় আফসোস! ওইসব বান্দার জন্য, যখন তাদের নিকট কোন রসূল আসেন, তখন তারা তাঁদের সাথে ঠাট্টা বিদ্রুপই করে। তারা কি দেখেনি আমি তাদের পূর্বে কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি যে, তারা এখন তাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না এবং যতোই আছে সবাইকে আমারই সম্মুখে হাযির করা হবে। এবং তাদের একটা নিদর্শন মৃত ভূমি; আমি সেটাকে জীবিত করেছি এবং এরপর তা থেকে শস্য উৎপন্ন করেছি, অতঃপর তা থেকে তারা আহার করে। এবং আমি তাতে বাগান সৃষ্টি করেছি খেজুর ও আঙ্গুরের এবং আমি তাতে কিছু সংখ্যক প্র¯্রবণ প্রবাহিত করেছি; যাতে তারা সেটার ফলমূল থেকে আহার করতে পারে এবং এটা তাদের হাতের তৈরী নয়; তবুও কি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে না? পবিত্রতা তাঁরই জন্য, যিনি সব জোড়া সৃষ্টি করেছেন, ওইসব বস্তু থেকে, যেগুলোকে ভূমি উৎপন্ন করে এবং তাদের নিজেদের থেকে আর ওইসব বস্তু থেকে, যেগুলো সম্বন্ধে তাদের খবর নেই। এবং তাদের জন্য এক নিদর্শন রাত; আমি সেটার উপর থেকে দিনকে অপসারিত করে নিই; তখনই তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে; এবং সূর্য ভ্রমণ করে আপন এক অবস্থানের জন্য; এটা হচ্ছে নির্দেশ পরাক্রমশালী, জ্ঞানময়ের এবং চন্দ্রের জন্য আমি মানযিলসমূহ (তিথি) নির্দ্ধারণ করেছি, অবশেষে তা পুনরায় (তেমনি) হয়ে গেলো যেমন খেজুরের পুরাতন শাখা। সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রকে নাগালে পাওয়া এবং না রাতের পক্ষে সম্ভব দিনকে অতিক্রম করা এবং প্রত্যেকটা একেক বৃত্তের মধ্যে ঘুরছে এবং তাদের জন্য একটা নিদর্শন এ যে, আমি তাদেরকে তাদের পূর্ব-পুরুষদের পৃষ্ঠদেশের মধ্যে বোঝাই নৌযানে আরোহণ করিয়েছিলাম এবং তাদের জন্য অনুরূপ নৌযানসমূহ সৃষ্টি করে দিয়েছি, যেগুলোতে তারা আরোহণ করছে এবং আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে নিমজ্জিত করতে পারি, তখন এমন কেউ নেই যে, তাদের ফরিয়াদ শুনে সাড়া দেবে এবং না তাদেরকে রক্ষা করা হবে; কিন্তু আমার নিকট থেকে দয়া ও একটা সময় পর্যন্ত ভোগ করতে দেয়া (হলে)। এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা ভয় করো তাকে, যা তোমাদের সম্মুখে আছে এবং যা তোমাদের পেছনে আগমনকারী এ আশায় যে, তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে;’ (তখন তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।) এবং যখনই তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনসমূহ থেকে কোন নিদর্শন তাদের নিকট আসে, তখনই তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ্ প্রদত্ত সম্পদ থেকে তাঁরই পথে ব্যয় করো।’ তখন কাফিরগণ মুসলমানদেরকে বলে, ‘আমরা কি তাকেই আহার করাবো, যাকে আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে আহার করাতেন? তোমরা তো নও, কিন্তু সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে’ এবং বলে, ‘কবে আসবে এ প্রতিশ্রুতি, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?’ তারা অপেক্ষা করছে না, কিন্তু একটা বিকট শব্দের, যা তাদেরকে গ্রাস করবে যখন তারা দুনিয়ায় ঝগড়ার মধ্যে আটকা পড়ে থাকবে। তখন তারা না ওসীয়ত করতে পারবে, এবং না আপন ঘরে ফিরে যেতে পারবে। এবং ফুৎকার দেয়া হবে শিঙ্গায়, তখনই তারা কবরগুলো থেকে আপন প্রতিপালকের প্রতি ছুটে আসবে। বলবে, ‘হায়, আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করলো! এটা হচ্ছে তাই, যার পরম করুণাময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং রসূলগণ সত্যই বলেছেন।’ তা’ তো হবে না, কিন্তু এক বিকট শব্দ, তখনই তারা সবাই আমার সম্মুখে হাযির হয়ে যাবে। সুতরাং আজ কোন আত্মার উপর কোন যুলুম হবে না এবং তোমরা প্রতিফল পাবে না, কিন্তু আপন কৃতকর্মের। নিশ্চয় জান্নাতবাসীগণ সেদিন মনের আনন্দে শান্তি ভোগ করবে। তারা এবং তাদের বিবিগণ ছায়াসমূহে থাকবে আসনসমূহে হেলান দিয়ে। তাদের জন্য তাতে ফলমূল থাকবে এবং তাদের জন্য থাকবে তাতে যা তারা চাইবে। তাদের উপর ‘সালাম’; বলা হবে- পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আর ‘আজ পৃথক হয়ে যাও হে অপরাধীরা!’ হে আদম সন্তানগণ! আমি কি তোমাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করিনি যে, শয়তানকে পূজা করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং আমার বন্দেগী করো। এটাই সোজা পথ এবং নিশ্চয় সে তোমাদের মধ্যে অনেক সৃষ্টিকে পথভ্রষ্ট করে দিয়েছে। তবুও কি তোমাদের বিবেক ছিলো না? এটা হচ্ছে ওই জাহান্নাম, যেটার তোমাদের সাথে প্রতিশ্রুতি ছিলো। আজ সেটার মধ্যে যাও; প্রতিফলস্বরূপ নিজেদের কুফরের। আজ আমি তাদের মুখগুলোর উপর মোহর করে দেবো এবং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে। এবং আমি যদি ইচ্ছা করতাম তবে তাদের চক্ষুসমূহকে বিলীন করে দিতাম; অতঃপর তারা লাফ দিয়ে রাস্তার দিকে যেতো, তখন তারা কিছুই দেখতো না। এবং আমি ইচ্ছা করলে তাদের ঘরে বসা অবস্থায়ই তাদের আকৃতিগুলো বিকৃত করে দিতাম। তখন তারা না আগে বাড়তে পারতো, না পেছনে ফিরে আসতে পারতো। এবং যাকে আমি দীর্ঘায়ু প্রদান করি তাকে সৃষ্টিগত গঠনের মধ্যে উল্টো দিকে ফিরিয়ে দি। তবুও কি তারা বুঝে না? এবং আমি তাঁকে কাব্য রচনা করা শেখাইনি এবং না তা তাঁর পক্ষে শোভা পায়। তা তো নয়, কিন্তু উপদেশ ও সুস্পষ্ট ক্বোরআনই; যাতে সতর্ক করে যে জীবিত থাকে তাকে; এবং (যাতে) কাফিরদের উপর বাণী অবধারিত হয়ে যায়। এবং তারা কি দেখেনি যে, আমি আপন হাতের তৈরীকৃত চতুষ্পদ জন্তু তাদের জন্য সৃষ্টি করেছি, অতঃপর এরা সেগুলোর মালিক? এবং সেগুলোকে তাদের জন্য নরম করে দিয়েছি। সুতরাং কতেকের উপর আরোহণ করে এবং কতেককে আহার করে। এবং তাদের জন্য সেগুলোর মধ্যে কয়েক প্রকার উপকারিতা এবং পানীয় বস্তুসমূহ রয়েছে। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না? এবং তারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য খোদা সাব্যস্ত করে নিয়েছে, এ আশায় যে, তাদেরকে সাহায্য করা হবে। সেগুলো তাদের সাহায্য করতে পারে না এবং সেগুলো তাদের বাহিনী, সবাইকে গ্রেফতার করে জাহান্নামের মধ্যে হাযির করা হবে। অতএব, আপনি তাদের কথায় দুঃখ করবেন না, নিশ্চয় আমি জানি যা তারা গোপন করে এবং যা তারা প্রকাশ করে। এবং মানুষ কি দেখেনি যে, আমি তাকে পানির ফোঁটা থেকে সৃষ্টি করেছি? তখনই সে প্রকাশ্য ঝগড়াটে। এবং আমার জন্য উপমা রচনা করে এবং নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে গেছে। বললো, ‘এমন কে আছে যে, অস্থিগুলোতে প্রাণ সঞ্চার করবে যখন সেগুলো একেবারে পঁচে গলে যায়?’ আপনি বলুন! সেগুলো তিনিই জীবিত করবেন, যিনি প্রথম বারেই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁরই নিকট প্রত্যেক সৃষ্টির জ্ঞান রয়েছে; যিনি তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন সৃষ্টি করেন, তখনই তোমরা তা দ্বারা আগুন জ্বালিয়ে থাকো এবং যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেন, তিনি কি সেগুলোর মতো আরো সৃষ্টি করতে পারেন না? কেন নয়? এবং তিনিই হন মহান ¯্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তাঁর কাজ তো এ যে, যখন কোন কিছু করতে চান তখন সেটার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘হয়ে যা’। তা তৎক্ষনাৎ হয়ে যায়। সুতরাং পবিত্রতা তাঁরই, যাঁর হাতে প্রত্যেক কিছুর অধিকার রয়েছে এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে।