সম্পাদকীয়
এ দেশের সুন্নী মুসলমানদের ঈমানী চেতনার আলোকবর্তিকা আওলাদে রাসূল মুর্শিদে বরহক রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরিকত আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি। তাঁর গোটা জীবন ছিল দ্বীন ইসলামের সঠিক রূপরেখা তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের প্রচার কাজে নিবেদিত। তিনি ইসলামের মর্মবাণী প্রচারের লক্ষ্যে নিজ মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে, আফ্রিকা, রেঙ্গুন ও পরবর্তীতে বাংলাদেশ সফর করেন। এ কর্মবীর মহাপুরুষ আয়েশি জীবন ত্যাগ করে সদা দ্বীনি খিদমতে নিজ জীবন অতিবাহিত করেন। তার চিন্তাধারা কর্মপরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল সুপরিকল্পিত। তাঁর প্রজ্ঞাও কর্মপন্থা ছিল সুদুর প্রসারি। তিনি ছিলেন মা‘আরিফে লাদুন্নিয়াহ্ ও উলূম-ই ইলাহিয়াহ্’র ধারক হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌরভীর একনিষ্ঠ অনুসারী ও খলীফা আল্লাহ্র এক মহান ওলী-ই কামিল। তদপুরি তিনি ছিলেন ইশ্ক্বে রাসূলের পায়কর। তাই তিনি একদিকে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের প্রদত্ত দ্বীন এবং এর প্রকৃত আদর্শ সুন্নী মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠায় নির্ভিকভাবে সচেষ্ট ছিলেন, অন্যদিকে দ্বীন ও মযহাবের বিরোধীদের প্রতি ছিলেন খড়গহস্ত। তাই তিনি যে আদর্শকে মনে-প্রাণে লালন করেছেন সেটাকে দুনিয়ায় স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠার ও ব্যবস্থা করে গেছেন।
রেঙ্গুন প্রবাসী চট্টগ্রামের বেশ কজন সম্মানিত ব্যক্তি হুজুর সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির মুরিদ ছিলেন। তাদের অনুরোধে চট্টগ্রামে তশরিফ আনেন হুজুর কেবলা সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি। তিনি চট্টগ্রামে তশরিফ এনে তাঁর অন্তর্চক্ষে দেখতে পান- বাতিলপন্থীদের সম্মিলিত গোমরাহীর অন্ধকার দূর করতে হলে সঠিক দ্বীন ইসলামের আলোর মশাল প্রজ্জ্বলন করতে হবে। তাই তিনি শুরু করেন সাচ্চা আলিম তৈরির বিশাল কর্মযজ্ঞ। আর এ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের জন্য গঠন করেছিলেন একটি সংগঠন ‘আনজুমান-এ শুরায়ে রহমানিয়া’ কালক্রমে এ সংগঠন আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট-এ রূপ লাভ করে। এ আধ্যাত্মিক সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তাঁরই নূরানী হাতে স্থাপিত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া। অত্র প্রতিষ্ঠান হতে শিক্ষা লাভ করে আলিমগণ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্বীনের আলো বিকিরিত করছে- ইসলামের সঠিক রূপরেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের দ্যূতি ছড়াচ্ছে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও। এ মহান দ্বীনি সংস্থা আনজুমানের মাধ্যমে এশিয়াখ্যাত জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া সহ প্রায় শতাধিক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। এ (যিলক্বদ) মাসের ১১ তারিখ এ মহান মনীষী হুযূর কিবলা হযরত সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ওফাত বরণ করেন। তাঁর ওফাত বার্ষিকীতে আমাদের সকলকে শপথ নিতে হবে- তাঁর নূরানী হস্তে প্রতিষ্ঠিত দ্বীনি বাগানসমূহের খালিস নিয়্যতে সততা, ও আন্তরিকতার সাথে সার্বিক পরিচর্যার মাধ্যমে দ্বীনি খিদমতে আঞ্জাম দিলেই আমরা তাঁর রূহানী ফয়েজ প্রাপ্ত হবো ইনশাআল্লাহ্। মাশায়িখ হযরাতের নিগাহে করম আমাদের নসীব হবে।
এ মাসের ১৪ যিলক্বদ সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফের মুখপাত্র খ্যাত মাশায়িখ হযরত কেরামের একান্ত প্রিয় ব্যক্তিত্ব, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার প্রক্তন শায়খুল হাদীস, শেরে মিল্লাত আল্লামা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী রহমাতুল্লাহি আলায়হির ২য় ওফাত বার্ষিকী। আমরা এ মহান আলিমে দ্বীনের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। মহান আল্লাহ্র দরবারে তাঁর দরজাত বুলন্দ করার জন্য ফরিয়াদ জানাই। তিনিও অকৃত্রিম মুর্শিদ প্রীতি ও সুন্নীমতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য অজীবন নির্ভিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তাই তিনি ছিলেন একাধারে শেরে মিল্লাত, যুগবরেণ্য মুফতী ও শায়খুল হাদীস।
এ মাস পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য পবিত্র মক্কা গমনের প্রস্তুতির মাস। করোনার বিধি-নিষেধের কারণে বিগত ২ বছর সীমিত পরিসরে হজ্ব আয়োজনের পর এ বছর অবারিত হলো হজ্ব পালনের সুযোগ। পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য অনেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। লাব্বায়ক আল্লাহুম্মা লাব্বায়ক ধ্বনিতে মুখরিত হবে মুসলিম উম্মাহর প্রাণকেন্দ্র পবিত্র হেরম শরীফ। সৌদি সরকার ইতোমধ্যে মোয়াল্লিম ফি সহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক খরচ বর্ধিত করার কারণে এবার হজ্বের ব্যয় বেড়ে গেছে। তবুও আল্লাহ্র পবিত্র ঘর ও প্রিয়নবীর রওজা মোবারক জিয়ারতের জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ প্রস্তুত। ইতোপূর্বে ওমরাহ্ পালন শেষে দেশে ফেরার সময় সৌদি সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে ওমরাহ্ পালনকারীগণ অবর্ণনীয় কষ্ট ও দুর্ভোগের স্বীকার হয়েছিলেন বলে খবরে প্রকাশ। তাই আমরা বাংলাদেশ সরকারের ধর্মমন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো আল্লাহ্র মেহমান হজ্বযাত্রীগণ যাতে নির্বিঘেœ হজ্ব পালন করতে পারেন সে ব্যাপারে সদা সজাগ দৃষ্টি রাখবেন এবং সৌদি সরকারের সাথে সার্বক্ষণিক সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে যথাযথ তদারকির মাধ্যমে সুষ্টুভাবে হজ্ব পালনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত আবেদন জানাচ্ছি।